ভিভিয়ান: ফটোগ্রাফির জগতের এক রহস্যময়ী নিভৃতচারী

ভিভিয়ান: ফটোগ্রাফির জগতের এক রহস্যময়ী নিভৃতচারী

Syed Asir Ha-Mim Brinto-

 

সাল ২০০৭, শিকাগো। স্থানীয় একটি অকশন হাউজ লোকসমাগমে পরিপূর্ণ। নিলামে বিভিন্ন জিনিসপত্র বেচাকেনা চলছে। ক্রেতাদের ভীড়ের মাঝে অন্য সবার মতোই এক যুবকের চোখদুটো খুঁজে বেড়াচ্ছিলো বিশেষ কিছু। যুবকের নাম জন ম্যালুফ। ইতিহাস বিষয়ে একটি বই লিখছিলো সে, এবং এর জন্য বেশ কিছু হাই রেজুলেশনের ঐতিহাসিক ছবির প্রয়োজন ছিলো তার। ফিল্ম ক্যামেরার নেগেটিভে ঠাসা কিছু বাক্স তার নজর কাঁড়ে। সবচেয়ে বড় বাক্সটির ভেতর থেকে কিছু নেগেটিভ বের করে আলোর দিকে ধরে জন বোঝার চেষ্টা করে আদৌ তার বইয়ের জন্য কাজে লাগবে এমন কিছু ছবি সেখানে রয়েছে কি-না। সত্যিকার অর্থে সেই পরিস্থিতিতে এভাবে এত নেগেটিভ দেখে দেখে ছবি খুঁজে বের করা সম্ভব ছিলো না। জন একপ্রকার বাজি ধরে বসলো। সেই বাক্সটি সে কিনে নেয়, যার জন্য তাকে গুণতে হয় ৩৮০ ডলার!

 

 

 

 

দুঃখের বিষয় জনের ইতিহাস বইয়ের জন্য উপযুক্ত কোনো ছবিই সেই এক বাক্স নেগেটিভে ছিলো না। জন এই বাক্সের মালিককে খোঁজার চেষ্টা করে। অকশন হাউজ সূত্রে জানা যায় মালিকের নাম ভিভিয়ান মায়ার। জন গুগলে এই নামে সার্চ করে কোনো তথ্যই পায় না। কিছুটা হতাশ জন বাক্সটি নিয়ে কী করবে ভেবে না পেয়ে তার বাড়ির ক্লসেটে ফেলে রাখে বেশ কিছুদিন। জন তখনও জানতো না নিজের অজান্তেই কী অমূল্য সম্পদের সংস্পর্শে সে চলে এসেছে!

 

বিভিন্ন ব্যস্ততা শেষে কিছুদিন পর জন আবারও এই বাক্সের ভেতরকার নেগেটিভগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে থাকে, এবং এক পর্যায়ে সে এগুলো স্ক্যান করে ছবিতে রূপ দিতে শুরু করে। ফটোগ্রাফি সম্পর্কে প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান না থাকলেও এই ছবিগুলো জনের বেশ ভালো লাগে; এমনকি অনুপ্রাণিত হয়ে জন তার পয়েন্ট এন্ড শ্যুট ক্যামেরাটি নিয়ে রাস্তায়ও বের হয়ে পড়ে ফটোগ্রাফি চর্চার জন্য। ফটোগ্রাফি জনের প্যাশনে পরিণত হয়। একইসাথে এই রহস্যও আরো দানা বাঁধতে থাকে তার মনে- কে এই ভিভিয়ান মায়ার? তিনি কি কোনো সাংবাদিক? বা কোনো পেশাদার ফটোগ্রাফার? কেন ইন্টারনেটে কোনো তথ্য নেই তার সম্পর্কে? কোথায় খুঁজে পাওয়া যাবে তাকে?

 

 

ইতোমধ্যে জন ২০০টি ছবি স্ক্যান করে সেগুলো ইন্টারনেটে ব্লগ আকারে প্রকার করে, এতে খুব একটা সাড়া পাওয়া যায় না। তবে ফ্লিকার একটি ডিসকাশন পোস্ট করলে সেটিতে প্রচুর কমেন্ট আসতে শুরু করে। জন এতে আরো অনুপ্রাণিত হয়ে দ্বিগুণ উদ্যমে ভিভিয়ানকে খুঁজতে শুরু করে। সে সেইদিন অকশন হাউজে বিক্রি হয়ে যাওয়া ভিভিয়ানের অন্যান্য বাক্সগুলোর ক্রেতাদের খুঁজে বের করে এবং তাদের কাছ থেকে বাক্সগুলো কিনে নেয়। এভাবে ভিভিয়ানের প্রায় ৯০% কাজ জন নিজের সংগ্রহে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়, যার মধ্যে প্রায় ১৫০০০০০ ফিল্মের নেগেটিভ, ৩০০০ এরও বেশি প্রিন্ট করা ছবি, কিছু অডিওটেপ সাক্ষাৎকার, হোমমেড মুভি, ভিভিয়ানের জীবদ্দশায় করা সংবাদপত্রের কাটিং এর বিশাল একটি সংগ্রহ, চিঠিপত্র ও অন্যান্য ডকুমেন্টস, তার ব্যবহার্য জামাকাপড়, জুতো, মাথার হ্যাট ইত্যাদি রয়েছে। পরবর্তীতে অন্য আরেক সংগ্রাহক, জেফ গোল্ডস্টেইন ভিভিয়ানের রেখে যাওয়া বাকি শিল্পকর্ম ও জিনিসপত্র নিজের সংগ্রহে নেন।

 

 

জন আবারও গুগলে সার্চ করে ভিভিয়ান মায়ারের নাম লেখে, এবার সে একটি তথ্য পায়, শিকাগো ট্রিবিউনে প্রকাশিত একটি ডেথ নোটিশ: ভিভিয়ান মারা গেছেন অল্প কিছুদিন আগেই, অর্থাৎ ২১ এপ্রিল, ২০০৯ এ। বিষণ্ণতা, দায়বদ্ধতা, মুগ্ধতা আর কৌতূহলের এক মিশেল অনুভূতি জনকে অদ্ভুতভাবে নাড়া দেয়। সে ভিভিয়ানের পরিচয় খুঁজে বের করে তার শিল্পকর্মকে মানুষের মাঝে প্রকাশ করার জন্য বদ্ধপরিকর হয়ে ওঠে!


অকশন হাউজ থেকে কেনা জনের সেই বাক্সগুলোর কোনো একটিতে একটুকরো কাগজ খুঁজে পায় জন, যাতে ভিভিয়ান মায়ারের নাম এবং একটি ঠিকানা ছাপা ছিল। ধরতে গেলে এটিই প্রথম ক্লু, যেটি ধরে জনকে এগিয়ে যেতে হয়েছিলো। এই ঠিকানায় ফোন করে জন যে তথ্য পায় তাতে বিস্মিত না হয়ে কোনো উপায় ছিল না! ভিভিয়ান মায়ারের নাম বলতেই ফোনের ওপাশ থেকে শোনা যায়, "ভিভিয়ান আমার ন্যানি (আয়া) ছিলেন।" জন কোনোভাবেই হিসাব মেলাতে পারছিল না, একজন সাধারণ মহিলা, যিনি কিনা মানুষের বাড়িতে কাজ করতেন এবং বাচ্চাকাচ্চা দেখাশোনা করতেন, কিসের দায়ে তিনি ষাটের দশকে শিকাগোর রাস্তায় ঘুরে ঘুরে এসব ছবি ক্যামেরাবন্দী করেছেন!

 

 

জন সেই ঠিকানায় গিয়ে ভিভিয়ানের আরো কিছু জিনিস খুঁজে পায় যেটা সেই বাসার স্টোরেজ লকারের ভেতরে ছিল। এবং এই জিনিসপত্রগুলো ভিভিয়ানকে আবিস্কার করার পথে একটি নতুন দিক খুলে দেয়। এই অংশে জন ভিভিয়ানের ব্যবহৃত কাপড় চোপড়, জুতা, হ্যাট, তার বিভিন্ন চিঠিপত্র এবং আরো নানা প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র খুঁজে পায়। এই চিঠিপত্রের উপরে লেখা ঠিকানা থেকে জন আরো কিছু পরিবারের সন্ধান পায় যেখানে ভিভিয়ান ন্যানি হিসেবে কাজ করতেন।

 

 

ভিভিয়ান মায়ারের জন্ম নিউ ইয়র্কে, ১৯২৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। যদিও তার কৈশোরের অধিকাংশ সময়ই ফ্রান্সে কেটেছে। তার পরিবার সম্পর্কে খুবই কম তথ্য পাওয়া যায়। এটুকু জানা যায় জন্মের পর ৪ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি তার মায়ের সঙ্গে নিউ ইয়র্কে ছিলেন; আদমশুমারির তথ্যমতে সেই সময়ে এক নারী ফটোগ্রাফার জিন বারট্র‍্যান্ডের বাড়িতে তারা একসঙ্গে থাকতেন। এটি সহজেই অনুমেয়, এই জিনই ভিভিয়ানের পরবর্তী জীবনে ফটোগ্রাফার হয়ে ওঠার পথে প্রথম প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছিলেন। তার মা মেরি মায়ার ফরাসি ছিলেন, বাবা ছিলেন অস্ট্রিয়ান। অনুমান করা হয়, অজ্ঞাত কোনো কারণে ভিভিয়ানের জন্মের অল্প কিছুদিন পরেই তার বাবা পরিবার ছেড়ে কোথাও চলে যান। বিভিন্ন সূত্রে এটিও প্রমাণিত হয় ১৯৩৯ সালে ভিভিয়ান মায়ের সাথে একবার যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত এসেছিলেন।

 

 

১৯৫১ সালে ২৫ বছর বয়সী ভিভিয়ান স্থায়ীভাবে চলে আসেন যুক্তরাষ্ট্রে, এসময় সাথে তার মা ছিলেন না। তিনি নিউ ইয়র্কে ন্যানি (মূলত আয়া, যিনি বাচ্চাদের দেখাশুনা করেন) হিসেবে এক বাড়িতে কাজ নেন। পরবর্তীতে ১৯৫৬ তে ভিভিয়ান শিকাগোর নর্থ শোরে চলে আসেন। এখানে তিনি একটি পরিবারে আয়া হিসেবে কাজ পান তিনটি শিশুকে দেখাশোনার জন্য, যেটি তার কর্মজীবনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ পরিবার হয়ে ওঠে। দীর্ঘ একটি সময় এই পরিবারের সাথে কাটে তার। এসময় তিনি তার ফটোগ্রাফি চর্চার ক্ষেত্রেও স্বাধীনতা পান। সেখানে তার একটি ব্যক্তিগত বাথরুম ছিল, যেটিকে তিনি ফিল্ম ডেভেলপের ডার্করুম হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেন। তিনি তার তোলা সাদাকালো ছবির নেগেটিভগুলো ডেভেলপ করে প্রিন্ট করতে শুরু করেন। ভিভিয়ানের ফটোগ্রাফি জীবনের সেরা সময়টা এখানেই কাটিয়েছেন তিনি। যথেষ্ট অবসর পেতেন, সেই সময়টাতে বেরিয়ে পড়তেন শিকাগোর রাস্তায়, গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে, মাথায় একটি ফ্লপি হ্যাট, গায়ে উলের ওভারকোট জড়িয়ে পায়ের আর্মি বুটে খটখট শব্দ তুলে হাতদুটো সেনাবাহিনীর মার্চের মতো শরীরের দুপাশে দুলাতে দুলাতে হেটে যেতেন; দেখে কে বলবে- এই নারী এক বাড়ির আয়া!

 

 

ভিভিয়ানের প্রথম ক্যামেরা ১৯৪৯ সালে কোডাক ব্রাউনি বক্স ক্যামেরা। এই ক্যামেরাটি তেমন উন্নত ফিচারসমৃদ্ধ ছিল না, একটি মাত্র শাটার স্পিড, কোনো ফোকাস নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই, এপারচার নিয়ন্ত্রণের কোনো ডায়াল নেই। এই ধরণের ক্যামেরা দিয়ে সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রে পোর্ট্রেট আর ল্যান্ডস্কেপ তোলা যায় বটে, কিন্তু ভিভিয়ানের কাজের ধরণের অনুযায়ী এই ক্যামেরা উপযুক্ত ছিলো না। তবে ১৯৫২ সালে ভিভিয়ানের ফটোগ্রাফি চর্চায় পরিবর্তন আসে। তিনি একটি জার্মান রোলেইফ্লেক্স ক্যামেরা কিনে ফেলেন, যেটি সেই সময়ের ভালো মানের ফিল্ম ক্যামেরাগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল।

 

 

ভিভিয়ানের ফটোগ্রাফিতে এক ধরণের নিজস্বতা ছিল। এবং রাস্তায় অপরিচিত কাউকে ফ্রেমবন্দী করার সময় তিনি যে অসামান্য ব্যক্তিত্ব বজায় রাখতেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ভিভিয়ানের প্রখর দৃষ্টিকে অগ্রাহ্য করে তাকে উপহাস করা কারো পক্ষে সহজ ছিলো না। তার ছবির বিষয়বস্তুর অধিকাংশই ছিল মানুষ, তাদের দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততা, অসামঞ্জস্যতা, আনন্দ, বিষাদ, ক্লান্তি, বিস্ময়।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

১৯৭৩ সালে ভিভিয়ান রঙিন ছবি তোলার দিকে মনোযোগ দেন। এসময় তিনি কোডাকের ৩৫ মি.মি. এক্টাক্রোম ফিল্ম ব্যবহার করতে শুরু করেন। এছাড়াও জার্মান বেশ কিছু এসএলয়ার ক্যামেরা তার সংগ্রহে ছিল । এই পর্যায়ে এসে ভিভিয়ানের ফটোগ্রাফির ধারাতে বড় রকমের পরিবর্তন আসতে শুরু করে। 'মানুষ' তার ফ্রেম থেকে ধীরে ধীরে সরে যায়, সেখানে জায়গা করে নেয় খুঁটিনাটি ব্যবহার্য জিনিসপত্র, সংবাদপত্র, গ্র‍্যাফিতির মতো বিষয়, সোজা কথায় এ্যাবস্ট্রাক্ট ফটোগ্রাফির দিকে আগ্রহী হয়ে ওঠেন ভিভিয়ান।

 

 

ফটোগ্রাফির পাশাপাশি বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ ভিভিয়ান ধারণ করেন, এছাড়াও অডিওটেপ সাক্ষাৎকারও পাওয়া যায় কিছু। তবে এসবের চেয়েও আরো একটা নেশা ভিভিয়ানের ছিলো- সংবাদপত্র থেকে আর্টিকেল কেটে কেটে সেগুলো সংগ্রহ করে রাখতেন তিনি। খুন, ধর্ষণ, শিশু নির্যাতনের শত শত ঘটনার রেকর্ড পাওয়া যায় ভিভিয়ানের এই সংগ্রহ থেকে। এই পেপার কাটিং এর নেশা একটা সময় ভিভিয়ানকে এমনভাবে পেয়ে বসেছিলো যে তার ব্যক্তিগত শোবার ঘরে কোনোমতে হাঁটার জায়গাটুকু বাদে বাকিটা সংবাদপত্রে পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিলো। এই ধরণের পাগলামির জন্য তাকে ন্যানির চাকরিও হারাতে হয়।

 

 

ভিভিয়ানের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানার মতো খুব বেশি সূত্র তিনি রেখে জাননি। '৫২ তে নিউ ইয়র্কে ফেরার পর থেকে তিনি সম্ভবত পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। কোনো বন্ধুও ছিলো না সেভাবে। তবে নিউ ইয়র্ক ও শিকাগোতে দীর্ঘ ৪০ বছর তিনি যেসব পরিবারে ন্যানি হিসেবে কাজ করেছেন, সেসব পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে যেটুকু জানা গেছে সেটুকুই একসূত্রে গেঁথে ভিভিয়ানের একটি অস্পষ্ট ব্যক্তিজীবনের প্রতিচ্ছবি দাঁড় করানোর চেষ্টা জন ম্যালুফ করেছে। অত্যন্ত চাপা স্বভাবের হলেও ভিভিয়ানের ব্যক্তিত্ব ছিল আকর্ষণীয়, বাচ্চারা এজন্য ভিভিয়ানকে খুব পছন্দ করতো। তিনি বাচ্চাদের নিয়ে খেলতেন, স্ট্রবেরি বাগানে ঘুরতে নিয়ে যেতেন, আর সাথে ক্যামেরা তো থাকতোই। চিরকাল অবিবাহিত থাকা ভিভিয়ান মাতৃত্বের স্বাদ কিছুটা হলেও পেয়েছিলেন এই ন্যানি পেশার সুবাদে।

 

 

১৯৫১ থেকে ১৯৬৫ সালের মধ্যে ভিভিয়ান দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করেন। ভ্রমণকালীন ছবিগুলোতে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক অবস্থা উঠে আসে। এভাবে চলতে চলতে ১৯৮০ সালের দিক থেকে ভিভিয়ান আর্থিকভাবে দৈন্যদশার মধ্যে পড়ে যান এবং একপর্যায়ে গৃহহীন হয়ে পড়েন। সেই সময়ে তার সন্তানতুল্য কয়েকজন এগিয়ে আসেন, যাদের তিনি ন্যানি হিসেবে লালন-পালন করেছিলেন। তারা ভিভিয়ানের বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু ভিভিয়ানের জীবনে তোলা সমস্ত ছবির ফিল্ম এবং অন্যান্য জিনিসপত্র শিকাগোর একটি লকারে পড়ে থাকে। লকারের ভাড়া দিনের পর দিন বাড়তে থাকে; বকেয়া ভাড়া পরিশোধ করতে না পারায় একপর্যায়ে ভিভিয়ানের সারাজীবনের সঞ্চিত শিল্পকর্ম নিলামে উঠে যায় বিক্রির জন্য। এবং পরবর্তীতে সেই নিলামেই জন ম্যালুফ এসব কিনে নেন।

 

২০০৮ সালে ভিভিয়ান বরফের ওপর পা পিছলে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। জীবনের শেষটা তার কাটে এক নার্সিংহোমে। অবশেষে ২০০৯ সালের এপ্রিলে ভিভিয়ান এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। তার এ প্রস্থান এতটাই নিভৃতে ছিলো যে, তার মৃত্যুর সংবাদ খুঁজে পেতেও পরবর্তীতে গবেষকদের বেগ পেতে হয়েছে। অথচ চাইলেই ভিভিয়ান তার কাজের প্রকাশ ও প্রচারের মাধ্যমে এক বর্ণাঢ্য শেষকৃত্যের মাধ্যমে বিদায় নিতেই পারতেন! মূলত তিনি কখনোই তা চাননি।

 

সমগ্র জীবনে নিজের তোলা ছবি যিনি লোকচক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে রেখেছেন, অন্য কারো হাত ধরে সেইসব ছবি বিশ্বের মানুষের কাছে পরিচিতি পাচ্ছে এটা জানলে ভিভিয়ান খুশি হতেন কি-না এটা একটা বড় প্রশ্ন। খ্যাতির বিড়ম্বনা সত্যিকার অর্থেই ভিভিয়ান তার পুরো জীবন ধরে এড়িয়ে চলতে চেয়েছেন, পেরেছেনও বটে। খ্যাতির জন্য নয়, ফটোগ্রাফিকে তিনি বেছে নিয়েছিলেন নিজের মনের খোরাক হিসেবে। তবুও জন ম্যালুফকে আমরা ধন্যবাদ দিতে পারি, তার হাত ধরেই আমরা ভিভিয়ানকে চিনেছি।

 

লেখক-

Syed Asir Ha-Mim Brinto

facebook.com/syedasir619

 

ভিভিয়ানের আরো কাজ দেখুন: http://www.vivianmaier.com/

 

তথ্যসূত্র:
▪️
https://cutt.ly/VSjw0bd

▪️Finding Vivian Maier (2013)- A documentary Film by John Maloof & Charlie Siskel
▪️
https://cutt.ly/5SjwZsW